রমার বয়স সবে ২৫। এই বয়সে শরীরের ওজনটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক। রমা সিদ্ধান্ত নেয় যে করেই হোক ওজন কমিয়ে আনবে৷ যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু হয়ে গেল লো-কার্ব ডায়েট প্রাকটিস করা। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে এই বিশেষ ডায়েটটি করা হয় যা বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয়। যাইহোক, প্রায় এক মাস ধরে লো-কার্ব ডায়েট প্রাকটিস করার পর রমার ওজন ভালোই কমে গেল।
কিন্তু সাথে কিছু নতুন সমস্যা দেখা দিল যেমন- বুক ধড়ফড় করা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, অবসাদগ্রস্থতা, দূর্বলতা ইত্যাদি। রমা দেরি না করে ডাক্তারের কাছে চলে গেল। ডাক্তার তাকে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দিল। পরীক্ষায় ধরা পড়ল 'অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন' (Atrial Fibrillation- হার্টের একটা রোগ)। এ রোগে হার্ট রেট অনিয়মিত ও দ্রুতগতির (র্যাপিড) হয়ে যায়। তাছাড়া এ রোগে আক্রান্তদের মাঝে স্ট্রোক (Stroke) ও হার্ট ফেইলিওর (Heart Failure) এর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশী থাকে। লো-কার্ব ডায়েটের সাথে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের সম্পর্ক কি?
প্রায় দুই দশক (১৯৮৫-২০১৬) ধরে চলতে থাকা এক গবেষণায় লো-কার্ব ডায়েটের সাথে হার্টের এই রোগের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে৷ ১৪ হাজার মানুষের (যাদের আগে থেকে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন ছিল না) উপর করা এই গবেষণায় তাদেরকে তিনটি ক্যাটাগরি যথা লো-কার্ব ডায়েট গ্রুপ, মডারেট-কার্ব ডায়েট গ্রুপ ও হাই-কার্ব ডায়েট গ্রুপে ভাগ করে নিয়মিত ফলো-আপে রাখা হয়। দেখা যায়, তাদের মধ্যে প্রায় ১৯০০ অংশগ্রহনকারী অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনে আক্রান্ত হয়েছে যারা সবাই লো-কার্ব ডায়েট গ্রুপে গত ২২ বছর ধরে ফলো-আপে ছিল।
কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া কমিয়ে দিলে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের মত হার্টের সমস্যা কেন হয়-এমন একটি প্রশ্নের জবাবে গবেষকরা বলেন, কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাদ্য আমাদের শরীরের ইনফ্লামেশন প্রসেসকে রুঁখে দেয়। যখন শরীরে শর্করার পরিমাণ কমে যায় তখন এই ইনফ্লামেশন (Inflammation) বেড়ে যায়। আর এই ইনফ্লামেশনের সাথে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের একটা লিংক বা সম্পর্ক রয়েছে। অন্য এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, শর্করা জাতীয় খাবার কমিয়ে দিয়ে ডায়েটে প্রোটিন ও ফ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (Oxidative Stress) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর এ সবকিছুই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হার্টের রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে৷ তাই লো-কার্ব ডায়েটের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
লো-কার্ব ডায়েট প্রাকটিস করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।
সূত্রঃ আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি